1. info@dainiknetrojolsahitthomagazine.com : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন
  2. info@www.dainiknetrojolsahitthomagazine.com : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন :
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৪ অপরাহ্ন

গল্প – বিষ্ণুকমল লেখিকা — মহুয়া মিত্র কলকাতা ভারত।

  • প্রকাশিত: রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৬৬ বার পড়া হয়েছে

গল্প – বিষ্ণুকমল
লেখিকা — মহুয়া মিত্র

কলকাতা ভারত।

গতকাল এখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে গেছিল, তাই তীব্র শীত ছাড়া আর কিছু উপলব্ধি করতে পারে নি রুদ্রাণী। তবে সকাল বেলা ওর আগাগোড়া কাঠের তৈরি কোয়ার্টারের বাইরে এসে রীতিমত অবাক হয়ে গেল ও। ছবিতে যেমন দেখা যায়, বইতে যেমন পড়া যায় – এই জায়গাটা ঠিক তেমনি। হিমালয়ের কোলে ভীষণ সুন্দর ছোট্ট একটা শহর, তবে একে শহর না বলে গ্ৰাম বলা ভালো। এখানকার সরকারি হাসপাতালে বদলী হয়ে এসেছে প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডঃ রুদ্রাণী রায়। এত বছরের কর্ম জীবনে ওর হাতে যে ক’টি শিশুর জন্ম হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই সুস্থ সবল হয়ে জন্ম নিয়েছে।

হাসপাতালে খুব একটা কাজ ছিল না। দুপুরের আগেই শেষ হয়ে গেল। শুনল আজ না কি এখানে হাট বসে। অনেক দূর দূর থেকে লোকজন আসে কেনাকাটা করতে। ও-ও ভাবলো, তাহলে তো ভালই হলো, একটু ঘুরে এলে মন্দ হতো না। বেড়ানোও হবে আবার দরকারি জিনিসপত্র কিছু কেনাও হবে। অতএব যেমন ভাবা তেমন কাজ।

শেষ বিকেলের আলো মেখে হাট জমজমাট। তবে সকলেই স্থানীয় দেহাতি পাহাড়ীরা। বেশ অবাক হয়ে রুদ্রাণী লক্ষ্য করল অন্যান্য সাংসারিক প্রয়োজনের তুলনায় মানুষের ভিড় বেশি হিমালয়ের জড়িবুটির দোকানে। একাধিক দোকান, সবখানেই ভিড়। তেমনই একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গেল ও। দোকানি একজন বৃদ্ধা। ওনার সামনে গাছের শিকড় বাকড়ের মাঝে উঁকি দিচ্ছে একটা অদ্ভুত সুন্দর ফুল। কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গেল রুদ্রাণী।

ভিড় ঠেলে ফুলটা হাতে তুলে নিল। হালকা হলুদ রঙের গন্ধহীন ফুল কিন্তু তার সৌন্দর্য অপার্থিব। মুগ্ধ হয়ে ফুলটা দেখছিল, হঠাৎ কানে এলো দোকানীর কন্ঠস্বর, — ” ইসে লে জা বেটি। অচ্ছা ইয়া বুড়া, ওহ তো পতা নেহি, পর কুছ হোগা।”

— ” ফুলটার নাম কি?”

— ” বিষ্ণুকমল। হর এক চাঁদনী রাত ভগবান বিষ্ণু খুদ ইহা আতে হে ইস ফুলকো লেনে কে লিয়ে। তুঝে বেচনা নেহি হে, ইউহি দে রহি হুঁ।”

— ” কিন্তু ফুলের তো কোন গন্ধ নেই মাঈজি?”

— ” সব হে, সময় তো আনে দে।”

গন্ধ পেতে গেলে সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে? কথাটা কেমন রহস্যময়! মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো রুদ্রাণীর।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল ওর। সারা ঘর অন্ধকার, ক’টা বাজে কে জানে! কিন্তু একটা কেমন গন্ধ আসছে না? অপূর্ব সুমিষ্ট সে গন্ধ। কিসের গন্ধ এটা? ধূপের? এত রাতে ধূপের গন্ধ আসবে কোথা থেকে? না কি কোনো ফুলের? তড়াক করে উঠে বসলো রুদ্রাণী। হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে দুড়দাড় পাশের ঘর ছুটে গেল যেখানে সেই ফুলটা রাখা। গিয়ে অবাক হয়ে দেখল সারা ঘরে থম মেরে আছে গন্ধটা, ফুল থেকে যেন উদগীরণ হচ্ছে সে গন্ধ। নেশা লাগে তাতে।

ফুলটা বেশ ছোট। সাধারণত গন্ধটা ঘরে বা খুব বেশী হলে কোয়ার্টারের বারান্দা অবধি থাকার কথা। কিন্তু রুদ্রাণীর পিছু পিছু ধাওয়া করেছে হাসপাতাল মায় অপারেশন থিয়েটার অবধি। ওর শ্বাসযন্ত্রে যেন বাসা গেড়েছে সেই ঘ্রাণ। অথচ ও ছাড়া আর কেউ পাচ্ছে না। আশেপাশের মানুষকে জিগ্যেস করে দেখেছে। এতটাই তীব্র ঘ্রাণ যে ঘোর লেগে আছে ওর, কি করছে না করছে কিছু বুঝতে পারছে না। এমন কি যা ওর এতদিনের ডাক্তারি কাজে হয় নি, আজ তাই হলো। প্রথম বার ওর হাতে মৃত শিশুর জন্ম হলো। তবে কোনো রকম অসুবিধা ছিল না মা বা সন্তানের। তবু হলো। প্রচন্ড অন্যমনষ্ক ও। বুঝি বা শ্বাস নিতে ভয় হচ্ছে।

ফুলটা এনেছে তিন চার দিন হয়ে গেল। এমনিই আছে, জল ছাড়া তবুও একটুও শুকিয়ে যায় নি। আরো আশ্চর্য সারা দিন ও ফুল পড়ে থাকে, রাত হলে ছড়িয়ে পড়ে তার ঘ্রাণ। তবে রুদ্রাণীর নাকে সব সময় লেগে রয়েছে তার তীব্রতা। এই ক’দিন অস্বস্তি নিয়ে কাটালো। তারপর না পেড়ে আজ বিকেলে অনেক দূরের খাদে গিয়ে ফেলে এল ফুলটা। এখন আর সেই ঘ্রাণের উপলব্ধি নেই। শান্তি মনে ঘুমোতে গেল।

আবার মাঝরাতে সেই ঘ্রাণের আঁচড় এসে ঝাপটা দিল। ঘুম ভেঙে পড়িমড়ি ছুটলো সেই গন্ধের উৎস সন্ধানে। পাশের ঘরে গিয়ে দেখল, সবখানে দেখলো, আঁতিপাতি খুঁজে দেখলো কিন্তু কোথাও নেই সেই ফুল। আর থাকবেই বা কি করে, সেটা তো ফেলে এসেছে বহুদূরে। একটা জড় পদার্থ কিভাবে পুনরায় এখানে আসবে? কিন্তু গন্ধটা তো মিথ্যা নয়।

ঐভাবেই পরদিন সকালে রোগী দেখছে, একজন বৃদ্ধা তার অন্তঃসত্ত্বা নাতনীকে নিয়ে এসেছেন। প্রসুতির সব ঠিক আছে। প্রেসক্রিপশন লিখছিল রুদ্রাণী, গন্ধ তো অবিচল, এখন তার ওপর যোগ হয়েছে মাথা যন্ত্রণা। কপাল ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎ লেখা থামিয়ে ও বৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল, — ” আজ আপনার নাতনী মরবে।”

— ” এ ডাকটার পাগল অওরত হে।” বলে শাপশাপান্ত করতে করতে বেরিয়ে গেল নাতনির হাত ধরে। অন্য রুগীরা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আচমকা মাথা ব্যথা উধাও, হাঁ করে বসে আছে রুদ্রাণী নিজেও। গন্ধে গা গুলিয়ে উঠছে। কেন বলল কথাটা নিজেও জানে না। ভাবছে, তবে কুলকিনারা মিলছে না। এমন সময় বাইরে থেকে হৈচৈ ভেসে এলো। একজন এসে জানালো রাস্তায় পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে, পাথুরে পথে মাথা ঠুকে সত্যি সত্যি ঐ বৃদ্ধার নাতনির মৃত্যু হয়েছে। দম বন্ধ হয়ে এলো রুদ্রাণীর, কিন্তু গন্ধটা রয়ে গেছে।

বিকেলে নিজের কোয়ার্টারে শুয়ে ছিল। মাথা সহ সারা শরীরে ব্যান্ডেজ। ঘটনার আকস্মিকতা কাটতে মৃতের পরিবার আরো লোকজন নিয়ে চড়াও হয় ওর ওপর। ওকে ডাইনি অপবাদে সাংঘাতিক মারধোর করে। অনেক কষ্টে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওকে উদ্ধার করে সেবা করে এখানে পৌঁছে দেয়। গন্ধ অবশ্য ওর সঙ্গে আছে।

রাতে হাসপাতালের এক আয়া ওর খাবার নিয়ে এলে ও তাকে সবটা খুলে বলে। সেই মহিলা ওকে বলল, — ” আমার জন্ম এই পাহাড়ে। এমন কোনো ফুলের কথা আমি জানি না। শুধু আমি কেন, কেউই জানে না। তাছাড়া এই হাটে যারা দোকান দেয়, সকলেই স্থানীয়। আপনার বলা ফুল বেচা বৃদ্ধার মত কেউ এখানে বসে না। আর আমি তো কোন গন্ধ পাচ্ছি না। এ আপনার মনের ভুল।”
এত মারাত্মক গন্ধ শুধু মনের ভুল? তা কি করে সম্ভব? তাছাড়া তিনটে জীবন চলে গেল ঐ গন্ধের চাপে। নাহ্, এর বিহিত দরকার।

পরদিন সকালে আবার সেই আয়া আবার রুদ্রাণীর ঘরে এসে ওকে রক্তাক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করল। নিজেই নিজের নাকে বারবার আঘাত করেছে। যদিও বেশি ক্ষণ জীবন থাকে নি, তবে শেষ সময়ে বলে ছিল, — ” আর কোনো প্রাণ কেড়ে নেওয়ার আগে আমিই শেষ হয়ে গেলাম। ঐ গন্ধ কিন্তু এখনও আছে।”

ফুলের রহস্য অধরাই থেকে গেল। ফুলটা কি হারিয়ে গেল না আজও ওৎ পেতে আছে পরবর্তী শিকারের জন্য!

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট