৬টি কবিতা-
১,
নিষিদ্ধ প্রেম
সারমিন চৌধুরী
সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম
চেয়ে দ্যাখ মলিন মুখখানি,
ব্যথা খোদাই করে ফুটে আছে ছাইয়ের ভঙ্গিমায়
সনাতম মহীরুহের মতো বহুযুগ আগে থেকে
বুকে জমা করেছে বিষাদরাশি নৈমিত্তিক,
যেখানে থাকে গৃহস্থবেদনা ঘুমহীন অবকাশে।
সন্ধ্যা নামলে ভারী হয় দিনের মুহূর্তগুলো
মদের ন্যায় গড়িয়ে যায় সাকির দুয়ারে,
বর্ষায় সদ্য ফোটা ফুলের মতো প্রেম খুঁজে
পাইনা সেতারের সুর হাওয়ায় মিশেও
অনবরত আরাধনায় বসে থাকতে থাকতে
অতঃপর গুপ্ত সম্রাজ্যে নিষিদ্ধ হয় প্রেম।
২.
বিবর্ণতা
সারমিন চৌধুরী
সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম
একটা ভেজা দাঁড়কাক
চুপচাপ ঠাঁই বসে কাঁপছে একাকী
শরতের শেষ সন্ধ্যায় কৃষ্ণচূড়ার ডালে।
পালক ভিজে গেছে বাসায় ফেরার ঠিক আগ মূহুর্তে
খাঁ খাঁ শূন্য কৃষ্ণচূড়া গাছে তখন তুমুল বেদনা।
রঙ ফিঁকে হয়ে আসা বিদঘুটে সন্ধ্যারাতে,
দুঃখের ভায়োলিন হয়ে বাজে ঝিঁঝিঁ পোকার দল।
অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে কালো কাক,
তার চোখমুখে তখন নীরব অভিমান
একটাই জমাট প্রশ্ন ঠোঁটের ডগায়!
কেন? খোদা আমাকেই কেন? বারেবার,
এই বিবর্ণতার চরম মূল্য চোকাতে হয়।
৩.
বিলাসী সুখ
সারমিন চৌধুরী
সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম
বুনোফুলের ঘ্রাণ নিয়ে ঘুম ভাঙে
হৃদয় গহ্বরে জেগে ওঠে হরেক শব্দের বুনন
শুধু কেবল ভালোবাসায় নয়,
সংশয়ে, সংকটে জীবন নৈমিত্তিক যাতনায়
অভাববোধের নিদারুণ কষাঘাতে পিষে,
পৃথিবীর অবুঝ বারান্দায় নীরবে চেয়ে দেখি
দূর থেকে বহু দূরে শতাব্দীর রাঙা ঠোঁটের হাসি।
পরিহাসে তাকিয়ে আছে আমাদের ক্লান্ত ছায়া,
কী দুর্বোধ্য পৃথিবীর মানুষের চেহারাগুলো!
কী অসীম ছলনায় পরিপাটি
বিলাসী সুখের অন্দরমহল!
৪.
অপরাজিতা
সারমিন চৌধুরী
সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম
আজ চলো হারিয়ে যায়
আমি, তুমি আর একগুচ্ছ নীল অপরাজিতা
কিছু বেলীর সুঘ্রাণ একরাশ প্রেমানুভূতি!
কিছু স্বপ্নের আবেশ ছোঁয়া স্নিগ্ধক্ষণ রোদেলা দিনের
আকাঙ্ক্ষিত মধুক্ষণ সুখের আলাপচারিতা।
হেঁটে যাব চিরল ঘাসে ভাবনার আদলে
কুয়াশা ভেজা লাল গোলাপের পাপড়ি ধুয়ে
পান করব গোলাপ জলের অমৃত,
খুনসুটিতে বুনবো দু’জন মাকড়সার সুতীক্ষ্ণ জাল
বসন্তের পুষ্প বৃষ্টি হবে মধুচন্দ্রিমায়!
অপেক্ষার অবসানে গাইবে গান কোকিলা
আনন্দের বারি ঝরবে নেত্রধারায়।
৫.
মেকি স্বভাব
সারমিন চৌধুরী
সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম
স্বপেরা মরে যায় যন্ত্রণার করাঘাতে পিষে
আমরা বেঁচে থাকি মৃত্যু আছে বলে
কিছুটা ভয়ে কিছু বা সংশয়ে,
এই দুনিয়া ক্ষণিকের পুষ্পোদ্যান;
সন্ধ্যায় ফুটে খিলখিলিয়ে প্রভাতে ঝরে যায়।
শিরদাঁড়া চূর্ণ হয় দম্ভের পাহাড়ে চড়লে,
অথচ, আমাদের অহংকার, ঔদ্ধত্য কমে না
বরং বেড়ে চলে মেকি স্বভাবের আড়ালে।
৬.
অনুর্বর বর্তমান
সারমিন চৌধুরী
সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম
পিছনে তাকিয়ে দেখতে পাই
এক ধূসর বিবর্ণ অতীত বৃক্ষের ন্যায় দাঁড়িয়ে
যার খোলস ভুলের আচ্ছাদনে ঘেরা
শুষ্ক মরুভূমির মত অনুর্বর এ বর্তমান।
এটা যেন আমারই দু’হাতের অর্জিত ফল,
হুট করে এক পশলাবৃষ্টি যাদুবলে শস্য ফলায় না,
স্রষ্টা কাউকে দৈববলে দান করেনা সুখসমৃদ্ধি;
প্রচন্ড কষ্টার্জিত পৃথিবীর প্রতিটি সাফল্য।
ব্যর্থতার মোড়কে ঘেরা আমার এই বর্তমান,
হে প্রভু! আরেকটা সুযোগ দিবে কি?
বিচিত্র ধরণীতে নিজেকে পুনর্জীবিত করে,
অশ্রুজলে মরুভূমিকে সবুজে সাজানোর।